[english_date]

‘কবিতা এখন অনেক কমপ্যাক্ট হচ্ছে’- আজিজ কাজল

kajol
কবি আজিজ কাজল

জীবনের ভেতর কবিতার কলা বা নান্দনিকতা ফল্গু ধারার মতো প্রবহমান। কেউ টের পাক বা না পাক, প্রকাশ হোক বা না হোক, সীমাবদ্ধ জীবনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার যে ব্যাকুলতা—তাতেই কবিতার স্ফূরণ। মনের গভীর অনুভবকে অনুবাদ করে দেয় কবিতা— তাইতো কবিতা।
আধুনিক কবিতার কথা, তার দুর্বোধ্যতার কথা। বাংলা কবিতার ইতিহাসে গত শতাব্দির তিন বা ত্রিশ দশককে আধুনিক কবিতার অভ্যূদয়ের সময় হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। কবিতার পাঠক, কবি, আলোচক-সমালোচক কারো অজানা নয় যে সে-সময়ের পাঁচ কবিকে চিহ্নিত করা হয়, যাঁরা আধুনিক কবিতার আন্দোলন,আমদানী,চর্চা ও চর্যা শুরু করেছিলেন। বলা হয়ে থাকে রবীন্দ্রনাথের বলয় ভেঙ্গে কবিতার ‘মুক্তি’ ঘটাতে চেয়েছেন, সময়োপযোগি বিষয়-ভাষা-বয়ান-ভঙ্গিতে অর্থাৎ আমুল পাল্টে দিয়ে যথাসময়ের নতুনের কেতন ওড়াতে চেয়েছিলেন তাঁরা। তাঁদের সে অভিলাষ ও অভিযাত্রার সাফল্য বা ব্যর্থতা আমাদের আলোচ্য নয় এখানে। তবে দর্বোধ্যতার অভিযোগ তখনও ছিল এখনও আছে।

কবিতা বিষয়ক কিছু প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আর্থনিউজ২৪ এর সাথে কথা বলেছেন  কবি আজিজ কাজল 

আর্থনিউজ২৪ :  কেন কবিতা লিখেন?

কাজল :  জন্মেছি গ্রামে। শৈশবের দুরন্ত একটা সময় গ্রামেই কেটেছে। আমার দ্রৌপদী শৈশব জীবনের সাথে মিশে গিয়েছিলো নদী-সাগর-পাহাড় দুলর্ভ গাছপালা-প্রকৃতি; বিচিত্র ফলপাকুড় আর লতা পাতার ঘ্রাণ। অদূরবতীর্ উপকূল আর পাহাড়ী জনপদের মানুষ হওয়াতে, ছড়া-পুকুর-মিঠা পানি আর সাগরের বহুপদের নকশাকাটা বিচিত্র মাছ দেখে, তার রসনা নিয়ে শৈশবের একটা সময় পার করেছি। এভাবে শিয়ালের হুক্কাডাক, বন মোরগ-ডাহুক-বক আর লাল হরিণের মাংস খাওয়ার বিচিত্র দুলর্ভ অভিজ্ঞতাও আছে। এই অনুষঙ্গের ভেতরেই কবিতা নামক একটা বিষয় চেতনে-অবচেতনে, আমার হৃদয়-অস্তিমজ্জায় গেঁথে গেছে। এটা পরিণত বয়সেই দারুণভাবে উপলব্ধী করতে পেরেছি!…ঠিক এভাবেই কবিতা লিখছি এবং লেখক বনে গেছি।

kajol-3আর্থনিউজ২৪ : কবিতা কী সবার জন্য, যদি সবার জন্য নাহয়, তাহলে সবার জন্য নয় কেন?

কাজল : কেনো কবিতা সবার জন্য হবেনা? বা অনেকের জন্য? হা হা হা। আসলে এভাবে বলা হলে এক ধরনের বিভ্রান্তিই চলে আসে। আমি মনে করি কবিতা সবার জন্য , এই পজেটিভিটি ধারণ করা… তবে বয়সভেদে অনেকে অ্যাকাডেমিক উৎকৃষ্ট ছড়া-পদ্য-কবিতা পড়তে পড়তে ভাল দ্রোপদী কবিতার রূপ-রস-গন্ধটাও অনেকে কিছুটা পায়। আমি চাই এভাবে কবিতার সাথে আমাদের একধরনের সখ্যতা গড়ে ওঠুক।সুতরাং বিষয়টা যদি এভাবে শুরু হয় তাহলে কবিতা ধীরে ধীরে কমবেশি অনেকের জন্য হবেনা কেনো?…

আর্থনিউজ২৪ : সাম্প্রতিক কবিতার যে দুর্বোধ্যতা এই বিষয়কে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

কাজল : কবিতার দুর্বোধ্যতা নয় আমি বলবো উৎকৃষ্ট ভাল মানের কবিতার দুবোর্ধ্যতা… অ্যাকাডেমিক পঠন-পাঠনের মধ্যে থেকেও দেখেছি অনেকে ভাল কবিতা বুঝেন। এভাবে ধারাবাহিক পাঠ-অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেলে, কেনো কবিতা অনেকের কাছে বিশেষ মর্যাদা পাবেনা?

আর্থনিউজ২৪ :  সাম্প্রতিক তরুণ কবি ও অগ্রজ কবিদের মধ্যে কি রকম কবিতা-পার্থক্য লক্ষ্য করেন?

কাজল : সাম্প্রতিক তরুণ ও অগ্রজ কবিদের মধ্যে বয়সের পাথর্ক্য আমি খুব বড়ো মনে করিনা… যদিও বয়স-অভিজ্ঞতা অনেক কিছুর প্রভাবক… তবুও বলতে হয় বিভিন্ন পরিবেশ পরিপার্শ্বে বেড়ে ওঠা এবং পাঠ পরিধির কারণে- অনুজ কবিরাও অগ্রজ ধীমান প্রাজ্ঞ কবিদের মতো ভাল কবিতা দারুণ লিখছেন। 

আর্থনিউজ২৪ : বর্তমানে যে গদ্যকবিতা লেখা হয়, এ বিষয়কে আপনি কিভাবে দেখছেন?

কাজল : কবিতায় এখন অনেক কমপ্যাক্ট বা কনট্রাকশান হচ্ছে। ফলে স্বরবৃত্ত, অক্ষরবৃত্ত বা মাত্রাবৃত্ত যেই মাত্রায় কবিতা লিখিনা কেনো, কবিতায় নদীর মতো স্রোতস্বিনী একটা গীতিময়তা, লিরিক-ছন্দ না থাকলে, সে যে-কবিতাই হোক না কেনো-কবিতা তার সহজাত আবেদন বা গুরুত্ব হারাবে।

আর্থনিউজ২৪ : কবির ক্ষেত্রে কখন কবিতার বই করার উত্তম বলে মনে করেন?

কাজল : কবির ক্ষেত্রে বই কখন বের করা দরকার সেটা যদি সহজ ভাষায় জবাব দেই তাহলে বলবো, তাকে প্রচুর পঠন-পাঠনে সময় দিতে হবে। এভাবে আস্তে আস্তে বিভিন্ন জার্নাল-ম্যাগাজিন বা পত্রিকায় ছাপানোর একটা প্রাথমিক সম্পাদিত অভিজ্ঞতা দরকার। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদিত-অভিজ্ঞতায় একজন লিখিয়ে–কবিতার বই বের করার সিদ্ধান্ত যথোপযুক্ত হতে পারে বলে আমার ধারণা। 

আর্থনিউজ২৪ : সাম্প্রতিক কবিতা সম্পর্কে কিছু বলুন।

কাজল : সাম্প্রতিক কবিতার কথা নিয়ে আলাদা করে কথা বলতে গেলে কথা অনেক লম্বা হয়ে যাবে… সংক্ষেপে বলতে গেলে, বহু পুরনো প্রাচীন কবিতাও সময়ের নিরিখে এখনো সাম্প্রতিক। সমসাময়িক অনেক কবি লেখকরা সেই চযর্াপদ, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন আখ্যান-উপাখ্যান সহ অঞ্চল-প্রভাবিত হঁলা-গীতিকাকেও অনুসরণ করছে। তারা আমাদের মাটিজাত লালন-হাসন-রাঁধারমন-উকিল মুন্সী, শাহ আব্দুল করিমসহ অনেকের অধ্যাত্ম আর আধ্যাত্মিকতাকে দারুণ ভাবে ভাঙছেন। কেউ ফর্মে ভাঙছেন কেউবা পুরো কন্টেটের ভেতর দিয়ে ভাঙছেন। এভাবে অনেকে যাপিত আঞ্চলিক অভিজ্ঞতা গুলোকে নতুন উদ্যম দেয়ার চেস্টা করছেন যা পজিটিভ। তবে তা বিশ্বসাহিত্য পাঠ, বিভিন্ন শিল্প আন্দোলন, বা ইজমের পাঠ-অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে হলেই বেশি ভাল হয়… 

আর্থনিউজ২৪ : কবিতায় যে উত্তর-আধুনিক ফর্ম, এই বিষয়কে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

কাজল : কবিতার উত্তর আধুনিক ফর্ম বুঝার আগে বুঝতে হবে কবিতা আগে কবিতা হয়ে ওঠেছে কিনা!…এরপর আসছে সেটা আধুনিক উত্তর আধুনিক না উত্তরাধুনিক। কিংবা আরো বললে উত্তর ঔপনিবেশিক না নব্য আধুনিক ইত্যাদি। তবে উত্তর আধুনিক মতবাদ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অনেক বড়ো একটা দাশর্নিক মতবাদ বা ইজম নিয়ে হাজির হয়েছে। যা মাটিলগ্নতার ভেতর দিয়ে বিশ্ব কবিতার নিরিখে, সেটার সুলুক সন্ধান জরুরী হয়ে পড়েছে আমাদের ভাটি-বাংলার সচেতনার স্বার্থে।

আর্থনিউজ২৪ : ভবিষ্যতে কবিতার ট্রেন্ড কোন দিকে যেতে পারে বলে মনে করেন?

কাজল : ভবিষ্যতে কবিতার ট্র্যান্ড কোন দিকে যেতে পারে সেটা নিয়ে এক শেকড়চু্যত আশঙ্কা বা সংশয় কাজ করে প্রতিনিয়ত। অতিমাত্রায় প্রযুক্তি নিভর্রতা আমাদের যাপন আর চিন্তা-চর্যায় শেকড়কে চেনার বা জানার উপলব্ধী থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। কথা হচ্ছে আমি এই সময়ে বসে যদি ইউরোপীয় গ্রাম্য সমাজ, পরিবেশ-পরিপাশ্বর্, হলিউডের সিনেম্যাটিক দৃশ্য বা অ্যাডভেঞ্চারিজম- প্যাটার্নের ভেতরে কবিতা লিখি হবে??… এভাবে দেশীয় আচার নিয়ন্ত্রিত চটুল শব্দ,বাক্য,উপমা দিয়ে কবিতা লেখা শুরু করি; তাহলে কবিতা, সরল মাটিজাত ভাষিক যে মৌলিকতা চেতনা- তার বাঁধনকে আলগা করে দেয়… তাই নিজ মাটি,আচার-অভ্যাসের ভেতরে–আবহাওয়া, ভূপ্রকৃতি বা অ্যাডভেঞ্চারিজমকে প্রাধান্য দিয়েই আমাকে বৈশ্বিক হতে হবে। নতুন কবিতা লিখতে আসা বহু কবিও আছেন, যারা না বুঝে এই প্রবণতা ধরে বা এই অভ্যাসের মাঝে কবিতা করার চেস্টা করছেন। বিষয়টা তাদের সবসময় মাথায় রাখা একান্তই জরুরী। 

আর্থনিউজ২৪ : বর্তমান সময়ে কার কার কবিতা আপনার ভালো লাগে?

কাজল : বতর্মান সময়ে কবিতা লিখছেন এমন অনেক কবির কবিতা ভাল লাগে। এই ছোট পরিসরে এতো অধিক নাম বা অধিক কথাও বলা যেহেতু সম্ভব নয়।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ