বডি মাস ইনডেক্স বা বিএমআই (BMI) নির্ণয় করে কাউকে রোগা বা মোটা বলা হয়ে থাকে। একজন লোকের ওজন কিলোগ্রামে মাপা হয় এবং উচ্চতা মিটারে মাপা হয়। এবার ওজনকে উচ্চতার বর্গফল দিয়ে ভাগ করা হয়। এই ভাগফলকে বলে বিএমআই।
বিএমআই ১৮ থেকে ২৪-এর মধ্যে হলে স্বাভাবিক। ২৫ থেকে ৩০-এর মধ্যে হলে স্বাস্থ্যবান বা অল্প মোটা। ৩০ থেকে ৩৫-এর মধ্যে হলে বেশি মোটা। আর ৩৫-এর ওপরে হলে অত্যন্ত এবং অসুস্থ পর্যায়ের মোটা বলা যেতে পারে।আবার ভুঁড়ির ব্যাপারেও কিছু মাপের ব্যাপার আছে। পূর্ণবয়স্ক পুরুষের জন্য প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের কোমরের মাপ ৯৪ সেন্টিমিটার বা ৩৭ ইঞ্চি পর্যন্ত স্বাভাবিক যদি তার উচ্চতা কম হয়। আর লম্বা পুরুষের ক্ষেত্রে কোমরের মাপ ১০২ সেন্টিমিটার বা ৪০.২ ইঞ্চি পর্যন্ত স্বাভাবিক।মহিলাদের ক্ষেত্রে কোমরের মাপ ৮০ সেন্টিমিটার বা ৩১.৫ ইঞ্চি পর্যন্ত স্বাভাবিক ধরা যেতে পারে। তবে মহিলাদের কোমরের মাপ ৮৮ সেন্টিমিটার বা ৩৪.৬ ইঞ্চির বেশি হলে অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে। সুতরাং, হুট করেই বিএমআই পরিমাপ বা কোমরের মাপ পরিমাপ না করে বলা যাবে না আপনি মোটা কিংবা আপনার ভুঁড়ি হয়েছে।
জেনে নিন চর্বি ও ওজন জমার কারনঃ
-অতিরিক্ত খাওয়ার জন্য দেহে চর্বি জমে।
-বংশগত কারণেও মানুষ মোটা হতে পারে।
-জিনগত ত্রুটির কারণে যদি লেপটিন হরমোন কম থাকে তাহলে ক্ষুধা বেড়ে যায়। এর ফলেও দেহে মেদ বৃদ্ধি পায়।
-থাইরয়েড হরমোন কমে গেলে ওজন বৃদ্ধি পায়।
-মদ্যপান, অতিরিক্ত ঘুম, মানসিক চাপ, স্টেরয়েড এবং অন্যান্য নানা ধরনের ওষুধ গ্রহণের ফলেও ওজন বাড়তে পারে।
বাড়তি ওজন কিংবা ভুঁড়ি নিয়ে অনেক সমস্যা। জেনে নিন এ থেকে কি সমস্যা হয়-
-বাড়তি ওজনের জন্য যেকোনো ধরনের হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
-বাড়তি ওজন রক্তচাপেরও কারণ।
-ডায়াবেটিস টাইপ-টু দেখা দিতে পারে মেদ বৃদ্ধির জন্য।
-মেদবহুল ব্যক্তির জরায়ু, প্রস্টেট এবং কোলন ক্যান্সারের সম্ভাবনা পাঁচ শতাংশেরও বেশি।
-ওজন বৃদ্ধির সাথে সাথে হাঁটাচলা করতে সমস্যা হয়।
-হাঁটুর সন্ধিস্থল, কার্টিলেজ ও লিগামেন্ট ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
-আর্থ্রারাইটিস, গেঁটেবাত এবং গাউট হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
-অতিরিক্ত চর্বি থেকে পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
-অতি ওজন এবং ভুঁড়ির জন্য যৌনক্ষমতা কমে যেতে পারে।
-পুরুষের শুক্রাণু কমে যেতে পারে এবং মহিলাদের অনিয়মিত ঋতুস্রাব হতে পারে।
-দেখতে যথেষ্ট দৃষ্টিকটু লাগে। কোনো পোশাকেই ভালো দেখায় না। বয়সের তুলনায় বয়স্ক দেখায়।
অতিরিক্ত ওজন ও ভুঁড়ি কমানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে-
-সঠিক খাদ্যগ্রহণ ও ব্যায়াম। কিন্তু দুটোই অত্যন্ত যত্নের সাথে নিয়মিত করতে হবে।
-নিয়মিত হাঁটা সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম।
-প্রতিদিন নিয়ম করে এক ঘণ্টা হাঁটতে পারলে খুবই ভালো।
-সাইকেল চালানো এবং সাঁতার কাটাও খুব ভালো ব্যায়াম।
-ভুঁড়ি কমাতে কিছু আসনের সাহায্য নেয়া যেতে পারে। এর মধ্যে ত্রিকোণ আসন, একপদ উত্থান আসন, পবন মুক্তাসন, পশ্চিমোত্থানাসন খুবই কার্যকর।
-চর্বিজাতীয় খাবার- মাখন, তেল, গরু ও খাসির গোশত এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
-সবচেয়ে ভালো হয় কেউ যদি ওজন কমাতে চান তবে ডায়েটিশিয়ান এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
-আজকাল অপারেশনের সাহায্যেও ভুঁড়ি কিংবা মেদ কমানো হচ্ছে। সাইপোসাকশন বা অ্যাবডোমিনোপ্লাস্টির সাহায্যে আজকাল মেদ কমানো হচ্ছে।
মেদ বা ভুঁড়ি কোনোভাবেই সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ নয় এবং নানা অসুখের কারণ এ কথা মনে রাখবেন।তবে চিন্তার কারণ নেই। আমি জানি আপনি পারবেন আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে, আপনার ভুরিটাকে আপনিই পারবেন নিজের পছন্দের শেইপে আনতে।