এবারএকঘরে করে রেখে নির্যাতন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও তার পরিবারের উপর।ইতিমধ্যেই পেরিয়ে গেছে নির্যাতনের ২২ দিন। নওগাঁর পোরশা উপজেলার দোয়াশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম সহ তার পরিবারকে গত ২২ দিন ধরে একঘরে করে রেখেছে কথিত গ্রাম্য মাতবররা। একঘরে করেই তারা ক্ষ্যান্ত হয়ননি, তাকে মসজিদে নামাজ আদায় ও তার বাড়িতে কোন দিনমজুরকেও কাজ করতে দিচ্ছেনা। এ ঘটনায় তিনি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেও কোন ফল পাননি। বাধ্য হয়ে তাঁর ছোট ভাই রুহুল আমিন বাদী হয়ে গত ২১ আগষ্ট নওগাঁ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্টেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
বিচারক মামলাটি গ্রহন করে গোয়েন্দা বিভাগের ওসিকে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে শিক্ষক নজরুল ইসলামও ২০ আগষ্ট জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ও সুষ্ঠ তদন্ত পূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্বাহী ম্যাজিষ্টেটের আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং- ৬৭সি/১৭ (পোরশা)। বিচারক মামলাটি গ্রহন করে ন্যায়বিচারের স্বার্থে পোরশা থানার ওসিকে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিল ও শান্তি রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা যায়, উপজেলার গনপতিপুর গ্রামের মৃত হাফিজ উদ্দীনের ছেলে নজরুর ইসলাম ও তার ছোট ভাই রুহুল আমিন দীর্ঘদিন যাবত একত্রে বসবাস করে আসছেন। নজরুল পাশ্ববর্তী দোয়াশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও তার স্ত্রী সেলিনা আকতার বারদোয়াশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তারা জানান, একই গ্রামের সহিদুল ইসলামের স্ত্রীর শাহনাজ বেগম তাদের বাড়িতে ঝি-এর কাজ করত। তার ছোট ভাই রুহুল আমিন শাহনাজের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলার অভিযোগ এনে গত ৫ আগষ্ট তারিখে রাতে কথিত মাতব্বব ইউনুসের খলিয়ানে বিচার বসে।
ওই মাতবররা বিচারের রায়ে বলেন, শাহনাজের সাথে ৭ বিঘা জমি লিখে দিয়ে বিয়ে আর ৬ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে। নইলে দুই ভাইকে সমাজ থেকে একঘরে করে রাখা হবে। এতে রুহুল আমিন রাজী না হলে সারারাত পিঠমোড়া করে গাছে সাথে দড়ি দিয়ে বেধে রেখে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। জমি দিয়ে বিয়ে ও জরিমানার টাকা দিতে অস্বীকার করলে ওই রাতেই সাদা নন জুডিশিয়াল ৩টি একশত টাকার ষ্ট্যাম্পে জোর করে রুহুলের স্বাক্ষর নেয় হয়। রুহুলের অবস্থা খারাপ হলে পরদিন সকালে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রেখে আসে। মাতবরদের রায় না মানায় সকালেই বাড়ি থেকে প্রায় এক লাখ টাকার মূল্যের একটি গরু নিয়ে যাবার চেষ্টা করলে নজরুল ও তার স্ত্রী বাধা দিলে তারা ফিরে আসে। ওই পরিবারটি এখনও একঘরে হয়ে আছেন।
এদিকে ভাইয়ের কারণে গত ১৮আগষ্ট শুক্রবারে বাড়ি সংলগ্ন মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়তে গেলে নজরুল মাষ্টারকে নামাজ পড়তে দেয়নি তারা। এ ছাড়াও বাগানে দিনমজুরকে কাজে লাগালে তারা ওই দিনমজুরকে কাজ করতে দেয়নি। বাধ্য হয়ে ২১ আগষ্ট ছোট ভাই রুহুল আমিন বাদী হয়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্টেট আদালতে ও শিক্ষক নজরুল ইসলাম জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ২০ আগষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। বিচারক মামলাটি গ্রহন অন্তে ওসি ডিবি ও ওসি পোরশাকে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা জন্য নির্দেশ দেন।
এদিকে একঘরে বা সমাজচ্যুত করে রাখার, ৬ লাখ টাকা জরিমানা, মসজিদ থেকে নামাজ পড়তে না দেয়া ও বাগান থেকে মজুর উঠিয়ে দেয়ার কথা স্বীকার করলেও নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরের কথা অস্বীকার করেছেন কথিত মাতবর সাইফুল মুহুরী ও বাবু। পোরশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, তিনি একঘরে করে রাখতে পারেন না। কেউ দোষ করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা আছে।