[english_date]

একটি খাল যখন শিক্ষার অন্তরায়একটি খাল যখন শিক্ষার অন্তরায়

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি ঃ শুষ্ক মৌসুমে কখনও গলা কখনও বুক পানি পেরিয়ে নিয়মিত আসতে হয় বিদ্যালয়ে। প্রতিদিন ভিজা কাপড়ে বিদ্যালয় আসতে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা অনেকে পানিবাহিত নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। বর্ষা মৌসুমে নদীর ওপারের প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে পাহাড়ি এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা শিক্ষায় আরো পিছিয়ে পড়ে। বিদ্যালয়ে কমে যায় উপস্থিতি। একান্ত আলাপকালে এমনই জানালেন বান্দরবানের লামা উপজেলার দূর্গম এম. হোসেন পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াবুল হক।   তিনি আরো বলেন, এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে শিশুদের সাঁতার জানতে হয়। যেখানে ছোট ছোট শিশুরা প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাল পার হয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করে। গত ১৭ আগষ্ট বৃহস্পতিবার পারাপারের সময় পানি বেশী থাকায় ২ জন শিক্ষাথী খালে ভেসে যায়। পরে সহপাঠীদের চিৎকারে স্থানীয়রা উদ্ধার করে। এই চিত্র প্রতি দিনের। বিদ্যালয়টির তিন পাশে ঘিরে রেখেছে এই পোপা খালটি। সমস্যা উত্তোরনে খালটির উপর একটি ব্রিজ অত্যান্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। ব্রিজটি হলে ওপারের কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াতের সুবিধা হবে।   সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কয়েক বছর আগে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়েছে। স্কুলটি উপজেলার সদর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার পূর্বে লামা সদর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের দূর্গম পোপা মৌজায় অবস্থিত। সম্প্রতি শিক্ষা অধিদপ্তরের পিডিবি-৩ প্রকল্পের আওতায় ৫ রুম বিশিষ্ট শ্রেণী কক্ষের দোতলা একটি আধুনিক ভবন হয়েছে। বিদ্যালয়টি লামা সদর ও রুপসীপাড়া ইউনিয়নের সীমানায় হওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী নদীর ওপার থেকে আসে। নদীর ওপারের অংহ্লাডুরী মার্মা পাড়া, ছিচাখইন মার্মা পাড়া, কলার ঝিরির মুখ, লক্ষণ ঝিরি, তাউ পাড়া, নয়া পাড়া ও এম. হোসেন পাড়া থেকে নদী পেরিয়ে শিক্ষার্থী স্কুলে আসে।  বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুবিনুল ইসলাম ও জমাইতি ত্রিপুরা বলে, আমাদের খুব কষ্ট হয় খাল পেরিয়ে স্কুলে আসতে। ছোটরা নদীতে ঠাঁই পায়না। বড়রা কোলে করে তাদের পার করতে হয়।   বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রবিউল আলম বলেন, পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির কারণে পোপা খালটি প্রায় সময় ভরপুর থাকে। পাহাড়ি খাল হওয়ায় খালটিতে ¯্রােত অনেক বেশী। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে খালটিতে ¯্রােত আরো বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে যায়। অংহ্লাডুরী মার্মা পাড়ার বাসিন্দা ও অভিভাবক মংএথোয়াই মার্মা বলেন, খালের ওপারের মানুষের পারাপারের কোন মাধ্যম নেই। শেষ অবলম্বন হচ্ছে সাঁতার। সাঁতার না জানলে এপার থেকে ওপারে যাওয়া আসা বন্দ হয়ে যায়। স্কুলের শিক্ষার্থীরা গায়ের জামা খুলে সাঁতার দিয়ে খালটি পার হয়ে তারপর স্কুলের ইউনির্ফম পরে বিদ্যালয়ে আসে। তাই এই এলাকার মানুষের দুঃখ লাঘবের জন্য এবং শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি থেকে রেহাই দেয়ার লক্ষ্যে মানবিক কারণে পোপা খালের উপর ব্রিজ নির্মাণ করা অতীব প্রয়োজন।  লামা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন জানান, শিক্ষার্থীরা যাতে নির্ভয়ে বিদ্যালয়ে আসতে পারে এবং মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পোপা খালের উপর জনস্বার্থে একটি ব্রিজ নির্মাণের বরাদ্দ দেওয়ার জন্য পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করছি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার যতীন্দ্র মোহন মন্ডল বলেন, বিষয়টি অনেকবার উপজেলা শিক্ষা মিটিংয়ে বলেছি। ব্রিজটির জন্য সব সময় বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কম থাকে।   লামা উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আসলে দুঃখজনক। পাহাড়ি এলাকা হিসেবে এমনিতে লামা উপজেলা শিক্ষায় পিছিয়ে আছে। তারপর এইরকম সমস্যা গুলো শতভাগ প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে প্রধান অন্তরায়। দ্রুত সমস্যাটি সমাধানের লক্ষ্যে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ