
মিয়ানমারের জলসীমা থেকে উদ্ধার হওয়া আরো ১০৩ বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সোমবার পতাকা বৈঠক শেষে বাংলাদেশের ২১ জনের প্রতিনিধি দল দুপুর ১টায় বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে ১০৩ মালয়েশিয়াগামীকে ফিরিয়ে আনেন। উদ্ধার হওয়া অভিবাসন প্রত্যাশীদের মধ্যে ষষ্ঠ দফায় তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হলো।
বর্তমানে তাদের কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে যাচাই বাছাই শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিজিবি কক্সবাজার ১৭ ব্যাটলিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর ইমরান উল্লাহ সরকারের নেতৃত্বে বিজিবি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও ডাক্তারের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশের ২১ জনের একটি প্রতিনিধি দল বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারে পৌঁছেন। সীমান্তের ঘুমধুম জিরো পয়েন্টের বিপরীতে মিয়ানমারের ঢেঁকিবনিয়ায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মিয়ানমার ইমিগ্রেশন বিভাগের মধ্যে এক পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পতাকা বৈঠক শেষে শনাক্ত হওয়া ১০৩ জনকে বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলের পর্যবেক্ষক ছিলেন বিজিবি কক্সবাজার সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল এম. আনিসুর রহমান।
বিজিবি কক্সবাজার সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল এম. আনিসুর রহমান জানান, সীমান্তের ঘুমধুম জিরো পয়েন্টের বিপরীতে মিয়ানমারের ঢেঁকিবনিয়ায় বাংলাদেশের ২১ জনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মিয়ানমার ইমিগ্রেশন বিভাগের মধ্যে এক পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পতাকা বৈঠক শেষে শনাক্ত হওয়া ১০৩ বাংলাদেশিকে ফেরত দেয়া হয়েছে। পতাকা বৈঠকে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের পক্ষে নেতৃত্ব দেন মিয়ানমার ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনাল রেজিস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট পরিচালক ইউ স নাইং।
বিজিবির এ কর্মকর্তা জানান, মিয়ানমারে শনাক্ত হওয়া আরো ৬০ জন বাংলাদেশি রয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে তাদেরও ফিরিয়ে আনা হবে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার আসিফ মুনীর জানান, মিয়ানমারে পতাকা বৈঠক শেষে ফেরত আনা ১০৩ বাংলাদেশিকে সীমান্তের ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এনে কক্সবাজার জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৬ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক রয়েছে। পুলিশের নিয়ন্ত্রণে তাদেরকে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে আনা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের তথ্য সংগ্রহ ও জিজ্ঞাসাবাদ করে দালালদের পরিচয় শনাক্ত করা হবে। অপ্রাপ্তবয়স্ক ৬ জনকে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মাধ্যমে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। অন্যদের নিজ দায়িত্বে বাড়ি পৌছানো হবে। ফেরত আনা ১০৩ জনের খাবার, চিকিৎসা, বাড়ি পৌঁছানো সহ সব দিক আইওএম বহন করবেন। আইওএম এর এ কর্মকর্তা জানান, ফেরত আনা ১০৩ জন ১৭ জেলার বাসিন্দা। তন্মধ্যে বগুড়া জেলার ৩১ জন রয়েছে।
এর আগে ৮ ও ১৯ জুন, ২২ জুলাই, ১০ ও ২৫ আগস্ট ৫ দফায় শনাক্ত হওয়া ৬২৬ জন বাংলাদেশিকে ফেরত আনা হয়েছে। গত ২১ মে ২০৮ জন ও ২৯ মে ৭২৭ জন অভিবাসন প্রত্যাশীকে মিয়ানমারের জলসীমা থেকে উদ্ধার করেছিল সে দেশের নৌবাহিনী। এরপর বাংলাদেশি হিসেবে দাবি করা তালিকা নিয়ে কাজ করে উভয় দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই তালিকায় শনাক্ত হওয়া বাংলাদেশিদের পর্যায়ক্রমে ফেরত আনা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় মিয়ানমারের জলসীমা থেকে সাগরে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে বাংলাদেশি হিসেবে শনাক্ত হওয়া ৬ষ্ঠ বারের মতো সোমবার দুপুরে ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে ফেরত আনা ১০৩ জনসহ সর্বমোট ৭২৯ জনকে ফেরত আনা হলো।