ইয়াবা ভয়াবহ এক মাদক। এতে আসক্ত হচ্ছে তরুণরা। দেশে প্রতিদিন আসছে কোটি কোটি টাকার ইয়াবা। অন্যান্য মাদকের তুলনায় ইয়াবায় আসক্তির সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার হিসাব মতে, ইয়াবায় আসক্তদের ৮০ ভাগই স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী। তবে আক্রান্তদের বিষয়ে কোন সরকারি পরিসংখ্যান নেই।
এদিকে আজ বিশ্ব মাদক বিরোধী দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হবে। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
১৯৮৭ সাল থেকে ২৬ জুন জাতিসংঘ ঘোষিত মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী দিবস বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘের অগ্রাধিকার তালিকার অন্যতম বিষয় মাদক সমস্যা। ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ এ সমস্যা থেকে মুক্ত নয়। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের পেছনে মাদকের অবৈধ ব্যবসা ও অপব্যবহার অন্যতম কারণ।
পানির মতো ইয়াবা আসার কারণে বাংলাদেশ রয়েছে এক ভয়াবহ ঝুঁকিতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মাদক সেবন করলে মস্তিষ্কে এক ধরনের উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়, তবে সেটা স্থায়ী হয় না। এরপর আসে মানসিক অবসাদ। ঘুম হয় না। আচরণে ও চিন্তায় বৈকল্য দেখা দেয়। ন্যায়-অন্যায়বোধ লোপ পায়। মানুষ অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে। অনেকে যৌন উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য ইয়াবা সেবন করে থাকে। তবে এটার কোন ভিত্তি নেই বলে চিকিত্সকরা জানিয়েছেন।
চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম এন হুদা বলেন, ইয়াবা সেবনে প্রথম একটু উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, তবে সেটা সাময়িক। পরে এসব সেবনকারী চিরতরে যৌন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। প্রতিদিন ২০/৩০ জন এমন রোগী তার কাছে আসে বলেও জানান তিনি।
জানা যায়, মিয়ানমারের ২৭ কারখানায় উত্পাদিত ইয়াবা চোরাচালান কোনো অবস্থাতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। বরং ইয়াবা চোরাচালান নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া মিয়ানমারে স্থাপিত ২৭টি ইয়াবা কারখানা বন্ধ করার জন্য পতাকা বৈঠকে বিজিবি মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) কর্মকর্তাদের অনুরোধ করলেও তারা ইয়াবা বিরোধী যৌথ অভিযান পরিচালনার কথা দিলেও তা করেনি।
এদিকে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারাও স্বীকার করছেন, দেশে ইয়াবার প্রবাহ বাড়ছে। শহরের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এখন ইয়াবা সহজলভ্য। তারা জানান, ইয়াবা পাচারের রুট টেকনাফ, কক্সবাজার এবং রাঙ্গামাটির ২৩১ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এর মধ্যে কেবল টেকনাফেই রয়েছে ইয়াবা পাচারের ৩০টি রুট। চলতি বছরও দেশটি সফরকালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বিষয়টি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। সেই ধারাবাহিকতায় মে মাসে ঢাকায় দুই দেশের মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পাশের দেশ ভারতের সঙ্গেও মাদক ঠেকাতে একাধিক বৈঠক হয়।
পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভারত এবং মিয়ানমারে মাদক ব্যবসা জমজমাট। আর বাংলাদেশ এই অঞ্চলের মাদক পরিবহনের রুট। তাই মাদকের ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. বজলুর রহমান বলেন, ইয়াবা এখন আমাদের সবচেয়ে বড় হুমকির নাম। কেননা এই নেশায় বুদ হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তরুণরা। ইয়াবা নিয়ন্ত্রণ করতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করা হয়েছে। এই কার্যক্রম এখনো চলমান। আশা করছি এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী: দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আমাদের ভবিষ্যত্ প্রজন্মকে মাদকের আগ্রাসন থেকে মুক্ত রাখার জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের পাশাপাশি মাদকের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ মাদক উত্পাদনকারী দেশ না হয়েও মাদকের অপব্যবহার থেকে মুক্ত নয়। আমাদের ভবিষ্যত্ প্রজন্মকে মাদকের আগ্রাসন থেকে মুক্ত করার জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের পাশাপাশি মাদকের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা বর্তমানে সময়ের দাবি।
এ আন্দোলনে পিতা-মাতা, শিক্ষক-শিক্ষিকা, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা, খেলোয়াড় ও ক্রীড়াব্যক্তিত্বসহ সমাজের সকল শ্রেণি ও পেশার বিবেকবান নাগরিককে অবদান রাখার জন্য তিনি উদাত্ত আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদক সমস্যা সমাধানে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠন, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, পিতা-মাতা, অভিভাবকসহ সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী মাদকের অবাধ বিস্তার রোধে মাদকবিরোধী আইনের যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি মাদক নিরোধ-শিক্ষা ও সচেতনতা সৃষ্টি এবং ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন।
পোস্টটি যতজন পড়েছেন : 232