১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ইসরায়েলের হামলায় লেবাননে ‘বাস্তুচ্যুত ১০ লাখ মানুষ’

ইসরায়েলের বিমান হামলার পর দক্ষিণ লেবাননের অনেক পরিবার এখন বৈরুতের সড়কে থাকছেন।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি বলেছেন, ইসরায়েলের অব্যাহত বিমান হামলায় লেবাননজুড়ে ১০ লাখের মতো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

“সম্ভবত এটাই সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুতির ঘটনা।”

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের  জানিয়েছে, বৈরুতে হিজবুল্লাহ নেতা নাসরাল্লাহ হত্যার দুইদিন বাদে রোববারের হামলায় অর্ধশতাধিক মৃত্যু হয়। অবশ্য হিজবুল্লাহও উত্তর ইসরায়েল লক্ষ্য করে রকেট ছুড়ছে।

ওদিকে ইসরায়েল বলছে, তারা ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান অভিযান শুরু করেছে।

হিজবুল্লাহ রোববার নিশ্চিত করেছে, তাদের সামরিক কমান্ডার আলী কারাকি এবং ধর্মীয় জ্যেষ্ঠ নেতা শেখ নাবিল কোয়াক ইসরায়েলি বিমান হামলায় মারা গেছেন।

“হিজবুল্লাহর ওপর কঠোর আঘাত আমাদের চালিয়ে যেতে হবে,” বলছিলেন ইসরায়েলির সামরিক প্রধান হারজি হালভি।

লেবাননের প্রধানমন্ত্রী মিকাতি বলেছেন, বিমান হামলার কারণে বৈরুত এবং দেশের অন্যান্য স্থানে লোকজন বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে।

সবার চাহিদা পূরণে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে; আশ্রয়শিবির ও হাসপাতালে চাপ বেড়ে চলেছে।

২৫ বছর বয়সী আয়া আইয়ুব বলেন, বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলের তাহউইতেত আল-ঘাদির শহরতলির বাড়িতে থাকা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় পরিবারের ছয় সদস্যকে নিয়ে তিনি ঘর ছেড়েছেন।

আশপাশের সব ভবনই পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

আইয়ুব এখন বৈরুতের যে বাড়িতে উঠেছেন, যেখানে আরও ১৬ জন থাকছেন।

“আমরা শুক্রবার বাড়ি ছাড়ি। যাওয়ার কোনো জায়গা ছিল না। আমরা ২টা পর্যন্ত রাস্তায় ছিলাম। এরপর একদল লোক নির্মাণাধীন এই আবাসিক ভবনে আশ্রয় পেতে আমাদের সহায়তা করে। আমরা মোমবাতি জ্বেলে রাত পার করছি। পানি আর খাবার বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে।”

৩৪ বছর বয়সী সাংবাদিক সারা তোহমাজ বিবিসিকে বলেন, বৈরুতের কাছে নিজের বাড়ি থেকে গত শুক্রবার মা ও দুই ভাইবোনের সঙ্গে তিনি বের হন। গাড়িতে করে সিরিয়া হয়ে জর্দানে পৌঁছাতে প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় লেগে যায় তাদের।

“জর্ডানে থাকার জায়গা পেয়েছি, নিজেকে আমার যথেষ্ট ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। এখানে আমার মায়ের আত্মীয়রা থাকেন। আমরা জানি না এরপর কী ঘটবে, কখন ফিরতে পারব তাও জানি না।”

বিবিসি লিখেছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা থেকে হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েল লক্ষ করে হামলা চালায়। পরদিন ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরায়েলি অবস্থান লক্ষ্য করে বিক্ষিপ্তভাবে হামলা চালায় হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা।

তখন থেকে হিজবুল্লাহ সদস্যসহ শত শত মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে সীমান্তের দুই পাড়েই।

ইসরায়েল রোববার বলেছে, ইয়েমেনে হুতিদের লক্ষ্য করে তারা বিমান হামলা করেছে। নিশানা হয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্র, রাস ইসা ও হুদায়দাহ বন্দরও।

পরে এক ভিডিওতে বন্দরে বড় ধরনের বিস্ফোরণ দেখা গেছে।

ইসরায়েলের ভাষ্য, সম্প্রতি হুতিরা যেসব স্থান থেকে হামলা চালিয়েছে, সেই সব স্থানকে নিশানা করা হয়েছে। পাশাপাশি ইরানি অস্ত্র যেসব পথ ব্যবহার করে আনা হয়, সেসব গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

ইয়েমেনের বড় অংশের নিয়ন্ত্রণকারী হুতিরা ইসায়েলি হামলাকে ‘নিষ্ঠুর আগ্রাসন’ হিসেবে বর্ণনা করে নিন্দা জানিয়েছে।

প্রতিশোধের অঙ্গীকার করে তারা বলেছে, ইসরায়েলি হামলায় চারজন মারা গেছে এবং ৩৩ জন আহত হয়েছে।

এদিকে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বাড়ায় আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়ছে।

ওয়াশিংটন সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েল যদি হিজবুল্লাহ বা ইরানের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধে যায়, তাহলে ইসরায়েলিরা হয়ত উত্তরাঞ্চলে তাদের বাড়িঘরে আর ফিরতে পারেবে না।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ