ঢাকায় সফররত ইইউ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে দেশের বর্তমান পরিবেশ, পরিস্থিতি এবং গণতন্ত্রের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা জানিয়েছে বিএনপি।
একই সঙ্গে বাংলাদেশে মানবাধিকার ও সুশাসনের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়।
ঢাকায় সফররত ইইউ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়গুলো আলোচনায় স্থান পেয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল সাড়ে ৪টায় বৈঠকটি শুরু হয়ে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে।
বৈঠকের পর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশ নিয়ে যে উদ্বেগ রয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক-আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চিত্রগুলো তারা উপলব্ধি করার জন্য আমাদের প্রশ্ন করেছেন। দেশের আজকের এই ক্রান্তিলগ্নে গণতন্ত্র নিয়ে আমরা যে উদ্বিগ্ন, সেই বিষয়গুলো আলোচনায় এসেছে।’
এছাড়াও বৈঠকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ, বিরোধী দলের ওপর নিপীড়ন নির্যাতন, গুম-হত্যা প্রভৃতি বিষয়ে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
তবে বৈঠকের পর ইইউ সংসদীয় প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের কিছু বলা হয়নি।
মঈন খান বলেন, ‘বৈঠকে বাংলাদেশে মানবাধিকার ও সুশাসনের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। দেশে গণতন্ত্র না থাকলে সুশাসন থাকতে পারে না। যে সরকারে জনগণের প্রতিনিধিত্ব থাকে না, সেই সরকার কখনো জনগণের কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। এ বিষয়গুলো আমরা তাদের কাছে তুলে ধরেছি।’
তিনি বলেন, ‘এটা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, গণতন্ত্র না থাকলে কোনো টেকসই উন্নয়ন হতে পারে না। ইউরোপের সঙ্গে আমাদের পোশাক শিল্পের যে সম্পর্ক, তা শক্তিশালী করতে হলে সরকারের যেমন ভুমিকা থাকে, তেমনি বেসরকারি খাতও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। তারপরও নীতিগত বিষয়ে সরকারের যে ভূমিকা রয়েছে, তা তখনই জোরদার হতে পারে যখন একটি জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার থাকে।’
‘সরকার যদি জনগণের প্রতিনিধিত্ব না করে, এদেশের ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব না করে এবং এদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিষয় প্রতিনিধিত্ব না করে, তাহলে সেই সরকার কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কখনো ব্যবসা বাণিজ্যকে জোরদার করতে পারবে না- এটা আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি’, বলেন মঈন খান।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তরে বিশ্বাস করে। সেই প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর করতে গেলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান।
ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের (ইপি) সদস্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ডেলিগেশনের চেয়ারপারসন জ্যঁ ল্যাম্বার্টের নেতৃত্বে ইপির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ডেলিগেশনের ভাইস চেয়ার রিচার্ড হাওইট, ইন্টারনাল মার্কেট অ্যান্ড কনজ্যুমার প্রটেকশন কমিটির সদস্য ইভান স্তেফান্স, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিটির সদস্য সাজ্জাদ করিম এবং ঢাকায় ইইউর রাষ্ট্রদূত পিয়েরো মায়াদন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে আবদুল মইন খান ছাড়াও দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন।
রাজনীতি, মানবাধিকার, পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ, নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে চার সদস্যের ইইউর সংসদীয় প্রতিনিধি দল তিনদিনের সফরে মঙ্গলবার ঢাকায় এসেছেন।