ইফতেখারুল করিম চৌধুরী-
এই জগতে মায়ের চেয়ে আপন কেউ নেই। মা ডাকটি মিষ্টি মধুর মা মানে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। সেজন্য ভালোবাসি মাকে। আলাদা একটি দিবস উদযাপন করা হয়। বিশ্বব্যাপি আর সেটা হলো মে মাসের দ্বিতীয় রোববার। বেশির ভাগ দেশে মা দিবস সম্প্রতিকরীতি। মা উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে ছুটির দিনটির রীতি অনুসারে চলে এসেছে। যখন অন্যান্য বহু দেশেও সংস্কৃতি এটিকে গ্রহণ করে তখন এই দিনটিকে ভিন্ন মাত্রা দেওয়া হয়। বিভিন্ পর্বের (ধর্মীয়, ঐতিহাসিক বা পৌরাণিক) সাথে সংযুক্ত করা হয়।
মায়ের মুখ থেকে শেখা যে ভাষা সে ভাষা তাকেই বলা হয় মাতৃভাষা। আবার মায়ের কাছে থেকে সন্তানরা যে শিক্ষা পায় বা গ্রহণ করে সেই শিক্ষাই হল মাতৃশিক্ষা সেই মাতৃশিক্ষাই সন্তানদের জীবনের জন্য একমাত্র প্রকৃত শিক্ষা। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তার জীবনের শেষ্ট শিক্ষক তার মা। পৃথিবীতে মাকে নিয়ে যতটা লেখালেখি হয়েছে অন্য কোন বিষয় নিয়ে ততোটা হয়নি। আবার একজন সন্তানতার মায়ের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষাকে যেভাবে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে অন্য কারো কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা ততোটা প্রয়োগ করতে পারে না। একজন ছাত্রকে বিদ্যালয় পাস করে মহাবিদ্যালয়ে আর মহাবিদ্যালয় পাস করে ভর্তি হতে হয় বিশ্ববিধ্যালয়ে। এই স্তর পরিবর্তনের অন্যথম কারণ হল শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যথার সীমাবদ্ধতা। অর্থাৎ প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় এই সব ভিন্ন ভিন্ন স্তরে ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক দ্বারা পাঠদান প্রয়োজন। এই স্তরগুলোকে পাঠদান করতে একজন শিক্ষকের সাধারণ যোগ্যতার পাশাপাশি কিছু বিশেষ যোগ্যতার প্রয়োজন। যেমন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য সি.ইন.এড. মাধ্যমিকের শিক্ষকদের জন্য বি.এড এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্তরের শিক্ষকদের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি ইত্যাদি। একজন মা’কে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক বলার একমাত্র কারণ এখানেই। মায়ের কোলে বসে পাওয়ায় সেই শিক্ষাই একজন সন্তানের জীবনকে করে সুগঠিত, সুমার্জিত, সুশঙ্খলা পূর্ণ তথা একজন সন্তানের আদর্শ জীবন গঠনের পরিপূর্ণ শিক্ষা। অথচ সেই শিক্ষা প্রদানের জন্য একজন মা’কে নিতে হয়নি বিশেষ কোন ডিগ্রি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, মায়ের কাছ থেকে পাওয়া সেই শিক্ষাই সন্তান তার জীবনে প্রয়োগ করে সবচাইতে বেশি। কমায়ের কোলে বসে আধো বোলে মা-বাবা ডাকা, কাছের পরিজনদের চেনা থেকে শুরু করে পরিপূর্ণ জীবনে এসে কঠিন সিন্ধান্ত গ্রহনে একমাত্র সহায়ক হিসেবে কাজ করে মায়ের সেই শিক্ষা। একজন মায়ের পরিপূর্ণ সু-শিক্ষার মাদ্যমে একজন সন্তান একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা। সুতারাং বিনা সংশয়ে বলা যায় একজন মা’ই পারে একজন সন্তানকে আদর্শ মানুষ গড়ে তুলতে।
এখন কথা হচ্ছে, একজন সন্তানকে দেয়া একজন মা’র সেই শিক্ষার মধ্যে যদি এতটুকু খাদ থাকে তবে একজন সন্তান দেশের বোঝা হতে তেমন বেশি সময় লাগবে না। ছোটবেলা থেকেই সন্তানের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনৈতিক কাজগুলোকে যদি একজন মা এগ্রয় দেন তবে সন্তান ঐসব অপরাধগুলো করতে উৎসাহিত বোধ করেন। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অপরাধগুলো করতে করতে সন্তান এক সময় বড় অপরাধগুলোর দিকে পা বাড়ায়। পরবর্তী সময়ে সে হয়ে পড়ে অপরাধ জগতের বাসিন্দা। পরিণত হয় সমাজ, জাতি তথা দেশের শত্রুতে। জাতি ধিক্কার দেন সেই সকল মা’দেরকে যারা জন্ম দিয়েছিলেন সমাজ, জাতি তথা দেশে সন্ত্রাস খুন, রাহাজানি, অন্যায়, অবিচার তথা, নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী দেশের এই সব কূ-সন্তানদের। এরা একটি দেশের জন সবচেয়ে বড় অভিশাপ। সবচেয়ে বড় বোঝা। একজন গর্বধারিনী হিসেবে একবার ভাবুনতো আপনি, আদরের সেই ছোট্ট সন্তানটি যেদিন ক্ষুদ্র অপরাধটি করে আপনার সামনে এসেছিল সেদিন যদি আপনি তাকে শাসন করতেন তবে আজ জাতির সামনে লজ্জিত হতে হতো না আপনাকে। সইতে হতো না এই ধিক্কা। এইতো আপনার কৃতকর্মেরই ফল। মা কতো কষ্ট করেই না সন্তানদের বড় করেন তা বলে শেষ করা যাবে না মধুর আমার মায়ের হাসি লেগে থাকে জীবনভর। শিশুর প্রথম বোল ফুটে মা’ ডাকার মাধ্যমে। মায়ের গুণকীর্তন লেখনী দিয়ে। শেষ হবে না। তুব মাকে সম্মান করি। শ্রদ্ধা জানাই।