আর্থনিউজ২৪: আজ দশই মহররম, শনিবার। পবিত্র আশুরা তথা হিজরী নববর্ষের প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখ। পৃথিবী সৃষ্টি থেকে কেয়ামত পর্যন্ত অসংখ্য ঘটনার দিন। শুধু মুসলমান নয় সকল মানুষের কাছে দিনটি স্মরণীয়। ইতিহাসে বিশাল জায়গা দখল করে আছে পবিত্র আশুরা দিবস। মহান আল্লাহ তায়ালা এ দিনেই আরশ, কুরছি, লওহ, কলম আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং এ দিনেই আদম(আ.) কে সৃষ্টি করে তাকে বেহেশতে স্থান দিয়েছেন। পরবর্তীতে শয়তানের প্ররোচনায় ভুলের কারণে এ দিনেই তাকে দুনিয়াতে পাঠিয়ে আল্লাহ প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন। হযরত নূহ (আ.) সাড়ে নয়শত বছর ধরে তাওহীদের বাণী প্রচারের পর যখন সে যুগের মানুষ আল্লাহর বিধি নিষেধ পালনে অস্বীকৃতি জানায়, তখন নেমে আসে আল্লাহর গজব। ফলে হযরত নূহ (আ.) এর সম্প্রদায় ধ্বংস হয়েছে। শুধু রক্ষা পেয়েছে তাওহীদে বিশ্বাসী নূহ (আ.) এর অনুসারীবৃন্দ। পবিত্র আশুরার দিনে মহাপ্লাবনের সময় হযরত নূহ (আ.) এর নৌকা তার অনুসারীদের নিয়ে জুদি পাহাড়ের পাদদেশে এসে থেমেছিল। আজো তার কিছু নিদর্শন সেখানে পাওয়া যায়। পবিত্র আশুরার দিনেই হযরত ইব্রাহীম (আ.) শত বিধি নিষেধের মধ্য দিয়ে জন্ম গ্রহণ করেছেন। পরবর্তীতে তিনি নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে উদ্ধার লাভ করেন এবং নিজের প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.) কে আল্লাহর নামে জবেহ করতে উদ্যত হলে খলিলুল্লাহ বা আল্লাহর বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছিলেন পবিত্র আশুরার দিনে। এদিনেই হযরত আইউব (আ.) কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন, হযরত ঈসা (আ.) জন্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং কাফেরদের ষড়যন্ত্রে শিকার হলে আল্লাহ তাকে চতুর্থ আসমানে উঠিয়ে নেন। এদিনেই হযরত দাউদ (আ.) আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা লাভ করেছিলেন, হযরত সোলেমান (আ.) তার হারানো রাজত্ব পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়েছিলেন, হযরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি লাভ করেছিলেন, হযরত ইয়াকুব (আ.) তার হারানো পুত্র হযরত ইউসূফ (আ.)কে চল্লিশ বছর পর ফিরে পেয়েছিলেন। পবিত্র আশুরার দিনে ফেরাউনের স্ত্রী বিবি আছিয়া শিশু মুসাকে গ্রহণ করেছিলেন। আবার স্বীয় কওমের লোকজনসহ হযরত মূসা (আ.) নীল নদ অতিক্রম করে ফেরাউনের জুলুম থেকে মুক্তি লাভ করেন। পক্ষন্তরে ফেরাউন সদলবলে নীল নদে ডুবে মারা যায়। পবিত্র আশুরা সমগ্র জগৎ সৃষ্টির দিন হিসেবে যেমনি স্বীকৃত তেমনি এদিন কেয়ামত অনুষ্ঠিত হয়ে জগৎ ধ্বংস প্রাপ্ত হবে। এদিনে এমনি আরো বহু ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এবং আরো হবে।
পবিত্র আশুরার দিন মুসলিম জাহানের জন্য যে কারণে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হৃদয়বিদারক স্মরণীয় তা হলো, এদিনে স্বৈরাচারী ইয়াজিদ বাহিনী বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রাণাধিক দৌহিত্র অকুতোভয় সৈনিক হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)কে একজন ব্যতীত সপরিবারে কারবালার মরু প্রান্তরে নির্মমভাবে হত্যা করে। হযরত ইমাম হোসাইন ক্ষমতার জন্য ইয়াজিদের বিরুদ্ধে লড়াই করেননি। বরং তিনি লড়াই করেছিলেন ইয়াজিদের ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডের রিবুদ্ধে। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন ইয়াজিদ ইসলামী রাষ্ট্রের নিয়ম কানুন লংঘন করে এবং কুরআন হাদীসকে উপেক্ষা করে মনগড়া পদ্ধতিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। ফলে ইমাম হোসাইন (রা.) আশংকা করেছিলেন আল্লাহর আইনে পরিচালিত খেলাফত পদ্ধতি বিলুপ্ত হয়ে মনগড়া স্বৈরতান্ত্রিক রাজত্ব কায়েম হবে। পরবতীতে তাই হয়েছে।
ইমাম হোসাইন (রা.) ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করেছিলেন, সত্যের পতাকা সমুন্নত রাখার জন্য তিনি সরিবারে জীবন দিয়ে শাহাদাত বরণ করে স্মরণীয় হয়ে আছেন। আজো কেউ যদি পাশ্চাত্য সভ্যতার হিংস্র থাবা ও আল্লাহর আইনের পরিবর্তে মনগড়া আইনে পরিচালিত রাষ্ট্রশক্তির প্রতিবাদ করতে গিয়ে জীবন বিলিয়ে দেন, তাহলে হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এর উত্তরসূরী হিসেবে শাহাদাতের মর্যাদা নিয়ে বেহেশত লাভ করবেন।
এদিন উপলক্ষে রোযা পালন করার কথা বলেছেন রাসূল (সা.)। এদিনে কুরআন তেলাওয়াত ও আলোচনার আয়োজন করে আল্লাহর কাছে দোয়া করা যায়- যাতে ইমাম হোসাইন (রা.) এর শাহাদাতের বদৌলতে আল্লাহ গোটাবিশ্বে ইসলামী শাসন কায়েম করার ব্যবস্থা করে দেন। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বেসরকারি টিভি চ্যানেলসমূহ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ প্রবন্ধ নিবন্ধ প্রকাশ করছে। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে আজ সরকারি ও বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান এবং সংবাদপত্র অফিসসমূহে ছুটি থাকবে। তাই আগামীকাল রোববার সংবাদপত্র প্রকাশিত হবে না। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে মসজিদ, মাদরাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্র প্রধানগণ পৃথক পৃথক বাণী প্রদান করেছেন।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ এডভোকেট, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা ইমাম হোসাইনসহ কারাবালার শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ও তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে আজ বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররমে ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।