মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রফতানির রূপরেখা চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে আজ। এজন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে শ্রমিক নিয়োগ-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার যৌথ কার্যকরী কমিটির এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত । প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রফতানির রূপরেখা চূড়ান্ত করতে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি জেনারেল শারফুদ্দিন বিন হাজ কাশিমের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল গতকাল (সোমবার) ঢাকায় এসেছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয় অনুষ্ঠিতব্য আজকের বৈঠকে প্রস্তাবিত জিটুজি-প্লাস পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগের রূপরেখা নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হবে। চূড়ান্ত হওয়ার পর শিগগিরই তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাঠানো হবে। এ পদ্ধতি কার্যকর হওয়ার পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবারো চাঙ্গা হবে বলে আশা করছেন জনশক্তি রফতানিকারকরা।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, দুদিনের সফরে আসা মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সকাল ১০টায় একই স্থানে যৌথ কার্যকরী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেবেন প্রবাসী কল্যাণ সচিব ইফতেখার হায়দার।
জানা গেছে, ২০১২ সালে কর্মী নিয়োগ-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত জিটুজি সমঝোতা স্মারকের আওতায় গঠিত হয় যৌথ কার্যকরী কমিটি। এ কমিটির ষষ্ঠ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় গত ১৪ সেপ্টেম্বর। এর আগে ২৪ জুন কুয়ালালামপুরে তত্কালীন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে এক বৈঠকে বেসরকারিভাবে তিন বছরে ১৫ লাখ শ্রমিক নেয়ার কথা জানান মালয়েশীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদ জাহিদ হামিদি। এর পরিপ্রেক্ষিতে জিটুজি পদ্ধতি সংস্কার করে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকেও (বিটুবি) এ কর্মসূচির আওতাভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরই অংশ হিসেবে গত ৯-১২ আগস্ট ঢাকা সফর করে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মালয়েশীয় টেকনিক্যাল টিমের সদস্যরা। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতেই দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল। বিষয়টি নিয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা সফররত মালয়েশীয় ওয়ার্কিং কমিটির সঙ্গে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসিসহ অন্য কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়।
ওই সময় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী জানান, বেসরকারিভাবে তথা বিটুবি নয়, সরকারিভাবে জিটুজি-প্লাস পদ্ধতিতে কর্মী নেবে মালয়েশিয়া। তবে সরকার চাইলে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিকে (বায়রা) এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পারবে। ওই সময় তিনি আরো জানান, সব খাতেই কর্মী নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি দল। এ পদ্ধতিতে মাসখানেকের মধ্যেই (অক্টোবরের মধ্যেই) শ্রমিক পাঠানো শুরু করা যাবে। এ ঘোষণার পরদিন দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা থাকলেও অজানা কারণে শেষ পর্যন্ত তা অনুষ্ঠিত হয়নি।
জানা গেছে, জিটুজি-প্লাস পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই করার জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি ‘এমওইউ’-এর খসড়া করে অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। তবে এ এমওইউ খসড়ার নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে এর কঠোর বিরোধিতা করে বায়রা। খসড়া আমলে না নেয়ার জন্য রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর পক্ষ থেকে পত্রিকায় বিজ্ঞাপনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন জানান বায়রা সভাপতি আবুল বাশার। এতে জিটুজি-প্লাস পদ্ধতি এবং সানারফ্লাক্স নামের মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী সংগ্রহের দায়িত্ব দেয়ার বিরোধিতা করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে খসড়াটি আরো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মন্ত্রিসভা থেকে ফেরত আসে বলে বায়রা নেতারা জানান। পরে ২০ অক্টোবর রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, সচিব খন্দকার ইফতেখার হায়দারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন বায়রার নির্বাহী কমিটির নেতারা। ওই সময় মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনো সিন্ডিকেট হবে না বলে আশ্বাস দেন মন্ত্রী।
এদিকে গত ২৭ অক্টোবর সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সরকারিভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সংখ্যা আশানুরূপ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। সেখানে জনশক্তি রফতানির গতি ও কলেবর বাড়ানোর জন্য দুই দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনার সুপারিশ করা হয়। বৈঠকের সুপারিশমালায় মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর বিষয়ে অতীত বদনামের পুনরাবৃত্তি রোধে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে কোনো অসাধু চক্র যেন বিষয়টি নিয়ে সিন্ডিকেট করতে না পারে, সে বিষয়ে বায়রার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে তীক্ষ নজরদারির ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিয়েছে সংসদীয় কমিটি।