প্রায় ২ মাসের বেশি সময় ধরে চলছে অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি বর্বর হামলা। এই হামলায় ইতোমধ্যে প্রায় ১৯ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ধ্বংসস্তূপের নীচে প্রায় আট হাজার মানুষ আটকা পড়েছে।
তাদের উদ্ধার তৎপরতায় বাধা দিচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী।এদিকে সব ধরণের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়ায় লাখ লাখ ফিলিস্তিনি খাবারের জন্য হাহাকার করছে। এত কিছুর পর কাঙ্খিত সাফল্য পাচ্ছে না ইসরাইলি বাহিনী। প্রতিদিন তাদের সৈন্য মারা যাচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন ভাইরাস জনিত রোগে। আর প্রতিরোধ যোদ্ধাদের কৌশল বুছতে না পেরে আর হতাশ তারা।
গাজা উপত্যকায় দীর্ঘ ৭১ দিন ধরে অভিযান চালিয়েও হামাসের কৌশল বুঝতে পারছে না ইসরাইলি বাহিনী। এর মধ্যেই হামাসের হাতে তিন বন্দীকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেছে তারা। তাছাড়া হামাসের যুদ্ধক্ষমতাও খুব হ্রাস করতে পারেনি। এমন প্রেক্ষাপটে ইসরাইলি সৈন্যদের মধ্যে হতাশা ভর করেছে বলে ইসরাইলের একটি পত্রিকা জানিয়েছে।
গাজা যুদ্ধে ইসরাইল তার সব ধরনের অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করছে। কিন্তু তারপরও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এখনো পায়নি। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের পর্যবেক্ষণ পোস্ট, স্নাইপার অবস্থান, মর্টার লাঞ্চার, অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক ক্ষেপণাস্ত্র, কমান্ড সেন্টার, আর্ম ক্যাশে তাদেরকে অস্থির করে ফেলেছে। সেইসাথে আছে মাটির নিচে থাকা হামাসের বিশাল সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক।
ইসরাইলি সূত্র জানিয়েছে, হামাসের হাতে আটক পণবন্দীদের শনাক্ত করতে না পারায় তারা সবচেয়ে বেশি হতাশ হয়ে পড়েছে।
ওই তিনজন নিহত হওয়ার বিষয়টি তাদেরকে আরো বেশি রহস্যে ফেলে দিয়েছে। হামাসের হাত থেকে তারা কিভাবে পালাতে সক্ষম হলো, তারা তা বুঝতে পারছে না। তারা কি আসলেই পালিয়েছিল, নাকি হামাসই তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছে?- এই প্রশ্নের জবাব পাচ্ছে না। আর হামাস তাদের ছেড়ে দিলে তা কত দিন আগে দিয়েছে? এই কয় দিন তারা কোথায় ছিল?
ইসরাইলের সাউদার্ন কমান্ডের এক সিনিয়র অফিসার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে কিছু তথ্য প্রকাশ করেছেন। এতে দেখা যায়, ইসরাইলের এক সৈন্য কয়েক ডজন দূরের এক ভবন থেকে অন্য একটি বাড়িতে ওই তিনজনকে দেখতে পায়।
ওই তিন ব্যক্তিই ছিলেন শার্টবিহীন। তাদের একজন একটি লাঠিতে করে একটি সাদা কাপড় উড়িয়ে শান্তির বার্তা দেন।
কিন্তু ইসরাইলি সৈন্যটি মনে করে যে এটা সম্ভবত হামাসের ফাঁদ। ফলে সে সাথে সাথে গুলি বর্ষণ করে এবং বাহিনীর অন্যদের শুনিয়ে বলে ’সন্ত্রাসী!’
তদন্তে দেখা যায়, ওই সৈন্যটির গুলিতে তিনজনের দুজন সাথে সাথে নিহত হয়। অপরজন আঘাতপ্রাাপ্ত হয়ে ভবনে ফিরে যায়।
এই পর্যায়ে ওই ব্যাটালিয়নের কমান্ডার ভবনটির বাইরে গিয়ে গুলি বন্ধ করার নির্দেশ দেন। ইতোমধ্যেই কারো কাছ থেকে ‘হিব্রু’ ভাষায় ‘সাহায্য করুন’ শব্দ শুনতে পায় ইসরাইলি সৈন্যরা।
কয়েক সেকেন্ড পর আঘাত নিয়ে সরে যাওয়া তৃতীয় ব্যক্তিটি আবার বাইরে আসেন। তখন আরেক সৈন্য তাকে গুলি করে হত্যা করে।
ব্যাটালিয়ন কমান্ডার তখন বুঝতে পারেন যে এই তৃতীয় ব্যক্তির চেহারা অন্য রকম। পরে তারা বুঝতে পারেন যে এই লোক হামাসের হাতে আটক বন্দী। এরপর তিনজনের মৃতদেহ সংগ্রহ করে তারা তাদের হেফাজতে নেয়।
তদন্তে দেখা গেছে, যে দুই সৈন্য গুলি করেছে, তারা উভয়েই প্রচলিত রীতি লঙ্ঘন করেছে।