১৩ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

অতিরিক্ত চিনি খেতে পছন্দ, তাহলে এখনই সাবধান হউন !

চিনি খান না এমন মানুষ খুঁজলে সহজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু চিনি খেতে আমরা যতই পছন্দ করি না কেন, এটা যে স্বাস্থ্যের উপকারের বদলে ক্ষতিই করে থাকে তা জানেন সবাই। সব বয়সী মানুষের জন্যই প্রয়োজনের অতিরিক্ত চিনি ক্ষতিকর। ক্ষতির পরিমাণটা যে কতো, তা কি আপনি জানেন? বাইরে থেকে দেখে হয়তো বেশি বোঝা যায় না, কিন্তু আমাদের শরীরের ভেতরে বেশ কিছু মারাত্মক ঘটনা ঘটে থাকে যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো নয়। জেনে নিন অতিরিক্ত চিনি খেয়ে ফেললে এক ঘন্টার মাঝে আমাদের শরীরে আসে কী কী পরিবর্তন।

০-১৫ মিনিট

অতিরিক্ত চিনি খাওয়া (সব মিলিয়ে দৈনিক ৯০ গ্রামের বেশি) হয়ে গেলে এর পরের মুহুর্ত থেকে শুরু করে ১৫ মিনিট পর্যন্ত চিনি মুখে থেকে যেতে পারে। এই চিনি মুখের ভেতরে থাকা ব্যাকটেরিয়ার কবলে পড়ে তৈরি করে এসিড। এই এসিড দাঁতের এনামেলের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর।

১৫-৩০ মিনিট

পাকস্থলী থেকে ক্ষুদ্রান্ত্রে এই চিনি গিয়ে ভেঙ্গে তৈরি করে গ্লুকোজ এবং সুক্রোজ। এগুলো চলে যায় আমাদের রক্তপ্রবাহে। রক্তে এতোটা গ্লুকোজ সামলাতে আমাদের অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন নিঃসরণ করে, যাতে গ্লুকোজ থেকে তৈরি হয় শক্তি।

এই শক্তি পেশিতে সরবরাহ করার চেষ্টা করে আমাদের শরীর। কিন্তু বেশি চিনি খাওয়ার ফলে আসলে শরীর পুরোটাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারে না। ফলে অতিরিক্ত অংশটা ফ্যাট হিসেবে জমা পড়ে আমাদের যকৃৎ বা লিভারে।

আর এতো পরিমাণে চিনি এবং শক্তি আমাদের শরীরকে অনেকটা স্ট্রেসের মাঝে ফেলে দেয়। এতে তৈরি হয় একটা অ্যাড্রেনালিন রিঅ্যাকশন। কর্টিসল এবং এপিনেফ্রিন রক্তপ্রবাহে চলে আসে, এতে আমাদের হার্ট রেট বেড়ে যায়। ফলে বেশ ঘামও হতে পারে এ সময়ে।

৩০-৪৫ মিনিট

রক্তচাপ বেড়ে যায়। মস্তিষ্কে ডোপামিনের মাত্রা বাড়ে। এতে সুগার হাই, অর্থাৎ শারীরিক ও মানসিক অস্থিরতা দেখা দেয়।

তবে এর চাইতে বেশি দরকারি ব্যাপার হলো সুগার ক্র্যাশ। আমাদের শরীর যখন রক্তপ্রবাহ থেকে চিনি ঝেঁটিয়ে বের করে দেয়, তখন দেখা যায় সুগার ক্রাশ। রক্তে গ্লুকোজ লেভেল কম যাবার ফলে ক্লান্তি ভর করে শরীরে।

এতে দেখা দিতে পারে মাথাব্যাথা। মনোযোগ দিতে সমস্যা হতে পারে। সবকিছু মিলিয়ে মেজাজ খিঁচড়ে যেতে পারে।

স্ট্রেস রিঅ্যাক্টিভ হরমোন এরপর লিভার থেকে চিনি বের করে দেবার চেষ্টা করে।

৪৫ মিনিটের পর

শরীরে এতক্ষণ হরমোনের মাত্রা ওঠানামা করার কারণে ইমিউন সিস্টেমে প্রভাব পড়ে। সাময়িকভাবে শরীর বিভিন্ন ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষেত্রে দুর্বল হয়ে যায়।

পুরো প্রক্রিয়াটির একটি চমৎকার ডায়াগ্রাম দেখে নিতে পারেন হাফিংটন পোস্টে।

কতটুকু চিনি খাওয়া নিরাপদ?

চিনি যে শরীরের বিভিন্ন ক্ষতি করে তা জানা কথা। অল্প করে চিনি খাওয়াটা ক্ষতিকর নয়। কিন্তু এটা জেনে রাখা দরকার যে একসাথে বেশি চিনি খেয়ে ফেললে শরীরের ওপর বেশ খারাপ প্রভাব পড়ে। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ৯০ গ্রাম পর্যন্ত চিনি খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু তারমানে এই না যে আপনি নিশ্চিন্তে তিনটা ৫১ গ্রাম মার্স বার চকলেট(৯১.৫ গ্রাম চিনি) খেয়ে ফেলতে পারেন এক দিনে। চকলেট, মিষ্টি, বিভিন্ন ডেজার্ট এবং বিভিন্ন কোলাজাতীয় কোমল পানীয়ে রয়েছে অতিরিক্ত চিনি। সারাদিনের খাবারের ক্যালোরির পাঁচ পার্সেন্টের বেশি এসব খাবার থেকে আসা উচিত নয়। বিভিন্ন জনপ্রিয় ক্যান্ডি থেকে আসা চিনির পরিমাণ দেখে নিতে পারেন ডেইলি মেইলের একটি চার্টে।

একারণে ১১ বছর এবং এর বেশি বয়সীদের জন্য এমন খাবার থেকে পাওয়া চিনির পরিমাণ ৩০ গ্রামের বেশি হওয়া ঠিক না। শুধু তাই না, একেবারে বেশি চিনি খেয়ে না ফেলে সারাদিনে অল্প অল্প করে খাওয়াটা ভালো।

আমাদের শরীরকে শক্তি দেবার জন্য চিনির দরকার আছে। কিন্তু একসাথে বেশি চিনি খেয়ে ফেলাটা শরীরের জন্যই ক্ষতিকর। ধীরে ধীরে খেলে শরীর একে প্রসেস করতে পারে ভালোভাবে

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ