গত সংখ্যার পর
রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের তথা টেকনাফের মানুষের কি পরিমাণ ক্ষতি করছে তা কেবল আমরা ভূক্তভূগিরাই জানি। রোহিঙ্গারা আমাদের জন্য বিষফোঁড়া। টেকনাফ সীমান্ত আজ অরক্ষিত। দাঙ্গা ছাড়াও প্রায় প্রতিদিন রোহিঙ্গারা সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। জলপথ বলে এ প্রবেশ সহজসাধ্য হয়েছে। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশকে দ্বিতীয় জন্মভূমি হিসেবে কল্পনা করে পাশাপাশি বর্তমানে তারা বাংলাদেশে আসাকে সৌদি আরবের সাথে তুলনা করে। কারণ মায়ানমারের মূল্যমানের চেয়ে বাংলাদেশের টাকার মান বহু গুণ বেশী। রোহিঙ্গা আজ বাংলাদেশীদের মাথায় বসে উকুন মারতে চাইছে তদুপরি যারা ক্যাম্পে আছে তারা রাজার হালতে দিন কাটাচ্ছে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার বদান্যতায়। এই সুযোগে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল ও তাদের আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য রোহিঙ্গা সমস্যাটা জিইয়ে রাখছে। পৃথিবীর কোন দেশে অন্য দেশের নাগরিক অবৈধ ভাবে চলাফেরা করতে পারে না অথচ অবাধে প্রবেশ করে এই দেশে যাচ্ছে তাই করে বেড়াচ্ছে। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক সামাজিক ও পরিবেশগত মারাত্বক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে এ দেশে যারা আসছিল তাদের অধিকাংশই বাংলাদেশে বিভিন্ন গ্রামে নগর ও শহর এলাকায় স্থায়ী বসতভিটা গড়ে তোলেছে। যারা বর্তামানে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ভোটাধিকারসহ রাষ্ট্রীয় সকল কাজে অংশগ্রহণ করছে। এমন কি আশি সালের পরে আসা অনেকেই স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিত্ব করছে। যা বাংলাদেশের স্থায়ী জনসাধারণের জন্য লজ্জাকর বটে। বর্তমানে বাংলাদেশ অসংখ্য জনপ্রতিনিধি আছে যাদের পূর্ব পুরুষ বার্মার। অধিকাংশই বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হয়ে এদেশে স্থায়ী বসবাস করছে। তাছাড়া ভাড়াঘর, কিংবা উপকূলীয় অঞ্চলে ঝুপড়ি বেঁধে তারা অবৈধ ভাবে বসবাস করছে। স্থানীয় কিছু স্বার্থানেষী মানুষ তাদেরকে সহায়তা করে মৎস্য শিকারসহ নানা কাজে ব্যবহার করছে। স্থানীয় হোটেল রেষ্টোরেন্টে, বাজারে রিক্সা চালক, দিন মজুর, কুলি, শ্রমিক হিসেবে কাজ করে পরবর্তীতে লোকালয়ে মিশে যাচ্ছে। আর স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা তাদেরকে কৌশলে ভোটাধিকার করে নিয়েছে। এই রোহিঙ্গারা এখন স্থানীয়দেরই চোখ রাঙ্গিয়ে কথা বলে। ক্ষেত্র বিশেষে তারাই এখন প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার কারণে এ দুঃসাহস বেড়ে গেছে। শ্রম বাজারের নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি চুরি ডাকাতি অনৈতিক কাজ সহ এমন কোন অপরাধ নেই যা তারা করছে না। এতো গেল অন্ত্যজ শ্রেণীর রোহিঙ্গাদের কথা।
আর উচ্চবিত্ত রোহিঙ্গারা রাষ্ট্রের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে শুধু চট্টগ্রাম কক্সবাজার নয় সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট নিয়ে বসবাস করছ। ছেলে মেয়েদেরকে উন্নত স্কুল কলেজে পড়াশোনা করাচ্ছে। পাশাপাশি তারা বার্মাসহ পৃথিবীর নানা দেশের সাথে অবৈধ ব্যবসা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশেও ছোট বড় ব্যবসায় জড়িত। স্বাধীনতা পরবর্তী যারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সাথে হাত করে নাগরিকত্ব নিয়েছিল তারাই এখন দেশের নানা বৈধ অবৈধ কাজে জড়িত আছে তাদের সন্তানরাও অনুরূপভাবে অবস্থান করছে। এই সকল অভিজাত বার্মাইয়ারা অত্যন্ত ধুর্ত, চটুল, সাহসী ও হিংস্র প্রকৃতির। তাদের প্রায়ই এ দেশের সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কাজে আর্থিক অংশগ্রহনের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করছে। কোন কোন ক্ষেত্রে এমন অভিযোগও উঠেছে তারা অস্ত্র চোরাচালান ও উগ্র ধর্মীয় কর্মকা-ের নেপথ্যে নায়ক হিসেবে জড়িত ছিল। আরও একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় বাংলাদেশে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় বার্মাইয়া বস্তি, রোহিঙ্গা পল্লী, টেকনাইফ্যা পাহাড়সহ বেশ কিছু জনবসতি গড়ে উঠেছে। যারা এদেশের স্বাভাবিক জনজীবনের চরম দূর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে দীর্ঘ দিন ধরে যারা এদেশের মানুষ বসবাস করে আসছে তারা কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। কাজেই রোহিঙ্গারা টেকনাফের জন্য মোটেই কল্যাণকর কিছু বয়ে আনেনি বরং জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এর জন্য কেবল রোহিঙ্গারা একক দায়ী নয় স্থানীয় অসাধু মানুষগুলোও জড়িত যারা নানাভাবে দিনের পর দিন আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে নিজ স্বার্থ আদায় করে নিচ্ছে। দেরীতে হলেও এদেরে ব্যাপারে এখনও স্থানীয় জনগণ সচেতন না হলে রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণ করে তাদেরকে উচ্ছেদের ব্যবস্থা না নিলে এখনই তারা সাপ হয়ে যে দংশনটা করছে পরবর্তীতে তার ভয়বহতা কি হবে তা কল্পনাও করা যায় না। কাজেই স্থানীয় মানুষকে বুঝতে হবে এদেরকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়া ঠিক হবে কিনা। প্রতিটি গ্রামে রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি গঠন করে এদের বিরুদ্ধে সোচ্ছার হতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে সরকারকে বারবার অভিযোগ দিতে হবে, প্রতিবাদ বিক্ষোভ জানাতে হবে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে এদেশ আসতে পারবে কেবল পাসপোর্ট এর মাধ্যমে। এদেশে কাজ করতে পারবে ওয়ার্ক পারমিট এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের নির্ধারিত নিয়মকানুন মেনে সরকারকে কর প্রদান করে। রোহিঙ্গা সমস্যা আন্তর্জাতিক ও মায়ানমারের রাজনৈতিক সমস্যা সে দেশই এর সমাধান করবে। বাংলাদেশের উপর বারবার এ দুভোর্গ চাপিয়ে দিয়েছে ও দিতে চাচ্ছে।
সত্যিই এ সীমান্ত অরক্ষিত। এই অনুপ্রবেশ ঠেকাতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে দেশের সার্বভৌমত্বও হুমকির মুখে পড়বে। এমন আশংকাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। এমনই অপচেষ্টার সংবাদ আমরা পত্র পত্রিকায় অনেকবার পড়েছি। সুতরাং সরকার ও স্থানীয় জনসাধারণকে বিষয়টির গভীরে গিয়ে ভাবতে হবে। তা নাহলে এতদ্বঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠী নিকট ভবিষ্যতে অনাকাঙ্খিত সংঘাতের মুখোমুখি হবে।